লেখাপড়া করে বড় কিছু হবার স্বপ্ন থাকলেও অর্থভাবে সেই স্বপ্ন প্রদীপ নিভে যেতে খুব বেশি দেড়ি হয়নি শাহিন মিয়ার। তাই চোখের সামনে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়তে দেখে নিজের অপূর্ণ স্বপ্নের কথা মনে পড়ে তার। তার মত কোন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন যাতে নষ্ট না হয় সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে শুরু করেন ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদেও পুনরায় স্কুলমুখীকরণ কার্যক্রম। ছুটির সময়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খবর সংগ্রহ করে তাদের অভিভাবকদের সাথে শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন, আলোচনা করেন শিক্ষা সচেতনমূলক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। পাশা পাশি সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেন তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে।
তার এই প্রচেষ্টায় অসংখ্য ঝরে পড়া শিক্ষার্থী পুনরায় স্কুলমূখী হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে নিজ এলাকায় ছোট পরিসরে একক প্রচেষ্ঠায় কাজ শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় তা বৃহৎ আকার ধারণ করে। ব্যক্তিগত উদ্দে্যগে ২০০৮ সালে কাজ শুরু করলেও ২০১০ সালে সমারিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর হতে অনুমোদন প্রাপ্ত হন পরবতীর্তে গড়ে তোলেন ‘‘দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী উন্নয়ন সংস্থা (ডপস)’’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
কেউ কেউ তার এই কাজকে পাগলের পাগলামি বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছে নানা সময়। কিন্তু কোন সমালোচনা, বাঁধা—বিপত্তি তাকে এই কাজ থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত করতে পারেনি এখনও। তবে সফলতার খাতাও একেবারে ফাঁকা যে তা নয়। বর্তমানে তার সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক এবং স্কুল—কলেজ মিলিয়ে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
শাহিন মিয়ার বেতন ও শান্তিরক্ষা মিশন থেকে প্রাপ্ত অর্থের অধিকাংশ ব্যয় করেন ডপসের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনতে। তার এই নিরলস প্রচেষ্টা, নিঃস্বার্থ সেবা এবং সফলতার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৫ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কতৃক “বিশিষ্ট সেবা পদক (বিএসপি)” এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডিভিশন পর্যায়ে ২০২০ সালে পেয়েছেন “”জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার”।
উল্লেখ্য, শেরপুর জেলার শিক্ষার হার ৪৮.০৪%। অর্থ্যাৎ এখনও প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ এখানে নিরক্ষর। দারিদ্রের দুষ্টচক্র থেকে রক্ষা পেতে এসব মানুষের প্রয়োজন শিক্ষার আলো। তাই শাহিন মিয়া, বিএসপি শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে দৃঢ় সংকল্প।
